প্যারিসে লিওনেল মেসির শুরুটা ছিল বিবর্ণ। প্রথম মৌসুমে প্রত্যাশার সঙ্গে মেলেনি প্রাপ্তির হিসাব। তবে সেই মলিনতা ঝেড়ে ফেলতে শুরু করেছেন আর্জেন্টাইন এই মহাতারকা। পিএসজির হয়ে এখন তিনি স্বরূপে ফিরতে শুরু করেছেন বলে মনে হচ্ছে নেইমারেরও। বন্ধু ও সতীর্থের প্রতি তার পরামর্শ, খেলাটা উপভোগ করতে হবে।

হঠাৎ করে ভিন্ন পরিবেশে গিয়ে মানিয়ে নেওয়া সবার জন্যই ভীষণ কঠিন। মেসির জন্য সেটা বলা যায় আরও বেশি কঠিন। পেশাদার ক্যারিয়ার শুরুর আগেই বার্সেলোনায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এরপর এক জার্সিতেই কেটে যায় ২২টি বছর। সেখানেই হয়ে ওঠেন বিশ্বসেরা। তারপর হঠাৎ যেন এক দমকা হাওয়ায় সব বদলে যায়।

বার্সেলোনায় আর্থিক দুরাবস্থা জেঁকে বসে। বাধ্য হয়ে ক্লাবটির সঙ্গে প্রায় দুই যুগের সম্পর্কের পাঠ চুকিয়ে গত বছরের অগাস্টে দুই বছরের চুক্তিতে পিএসজিতে যোগ দেন মেসি। ক্লাব ফুটবলে কাতালান দলটি ছাড়া ক্যারিয়ারে আগে অন্য কোথাও না খেললেও খেলোয়াড় হিসেবে মেসি যে মানের, তাতে অবশ্য ধারণা করা হচ্ছিল নতুন জায়গায়ও অনায়াসে ডানা মেলবেন তিনি।

যদিও বার্সেলোনার সঙ্গে নতুন চুক্তির প্রক্রিয়া এবং পরে দলবদলের জটিলতা নিয়ে সেবার প্রাক-মৌসুমে তিনি কোনো প্রস্তুতিই নিতে পারেননি। সঙ্গে নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপ্পের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারও ছিল। সব মিলিয়ে মৌসুম জুড়ে ধুঁকতে দেখা যায় মেসিকে। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ঝলক দেখা গেলেও তার খেলায় আগের সেই ধার দেখা যায়নি। আগের মৌসুমেই লা লিগায় সর্বোচ্চ গোলস্কোরার হওয়া এই ফরোয়ার্ড ২০২১-২২ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে করতে পারেন মাত্র ১১ গোল।

প্যারিসে অভিষেক মৌসুমে মেসির নিজের ছায়া থাকা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয় অনেক। এমনকি তাকে শুনতে হয় ক্লাব সমর্থকদের দুয়োও। গত মৌসুমে ক্লাব ফুটবলে বিবর্ণ পারফরম্যান্সের কারণে ২০০৫ সালের পর প্রথমবার ব্যালন ডি’ অরের ৩০ জনের তালিকায় জায়গা পাননি পুরস্কারটা রেকর্ড সাতবার জেতা এই তারকা।

এই মৌসুমে অবশ্য দারুণ ছন্দে আছেন তিনি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে প্রথম আট ম্যাচে করেছেন ৪ গোল। এর মধ্যে লিগ ওয়ানে ছয় ম্যাচে গোল ৩টি। সঙ্গে অ্যাসিস্ট ৬টি। এবার দারুণ ধারাবাহিক নেইমারও। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে আট ম্যাচে তার গোল ৯টি। ৭ গোল নিয়ে এমবাপের সঙ্গে যৌথভাবে লিগের সর্বোচ্চ স্কোরার তিনি। লিগে মেসির মতো তারও অ্যাসিস্ট ৬টি।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নেইমার বলেন, পিএসজিকে এখন নিজের ঘর মনে করছেন মেসি। লিওকে দীর্ঘদিন ধরে চিনি আমি। তাকে সাহায্য করতে পেরেছি। নতুন ঠিকানায় মানিয়ে কঠিন, কারণ অনেক বছর ধরে সে বার্সেলোনায় ছিল। এখন তার এবং তার পরিবারের জন্য সবকিছু বদলে গেছে।

নেইমার আরও বলেন, এটা কঠিন। কিন্তু আমি মনে করি, এখন সে উন্নতি করছে এবং পিএসজিকে নিজের ঘর মনে করছে। আমি চাই, সে উপভোগ করুক এবং আমরা একসঙ্গে উপভোগ করি। আমরা জানি, আমাদের সামনে অনেক কিছু এবং কঠিন মুহূর্ত আছে, কিন্তু আমি নিশ্চিত যে আমরা সব চ্যালেঞ্জ জিততে পারব।